satisfaction with হাতুড়েগিরি

দিন শেষে একটা কফি বানালাম। কিন্তু এমন অখাদ্য বানিয়েছি যে নিজেরই মেজাজ গেল খিঁচরে। তাই মেজাজ ঠিক করতে চলে এলাম এখানে। আসলে আজ মনটা  দিব্যি ভালোছিলো।  অনেকদিন পর হঠাত হাতুড়ে-গিরিটা করতে গিয়ে এত সহজে কাজটা করে দেবো নিজেরই সেই ভরসা ছিল না।
নাহ, শুরু থেকে বলি।  একটা লম্বা তার পেয়ে মাথায় এলো bed switch বানাবো। শীত কাল এসে গেছে। তার উপর সদ্য খাটের জায়গা বদলের ফলে switch board দুরে চলে গেছে। তাই এই ব্যবস্থ্যাটা জরুরিও ছিল বটে। তবে করা সোজা নয়।  অনেক দিন এসব কাজে হাত দি নাই। অতি সাধারণ কিন্তু দরকারী জিনিস গুলিও হাতের কাছে নেই। আছে বলতে শুধুই তার টুকু আর একটা screw driver. তবু লেগে পরলাম।
প্রথমে switch boardএ একটা extra switch খুঁজে বের করলাম, যেটার সাথে লাগানো টিউবটা আমি use করিনা। সেটা খুলে বের করে নিলাম। তারটা series এ জুড়ে দিলাম CFL এর সেই switchটার সাথে। একটু যুদ্ধ করতে হলো কারণ বহুকাল আগের wiring, অনেককাল কেউ হতও দেয় নাই। তাই জমে জট পাকিয়ে ছিল সব তার।  তবু হয়ে গেল শেষ অব্দি। টিক-টক, টিক-টক... testing ok. দিব্যি কাজ করছে।
এবার বিপদ বাধলো খোলা তারগুলো নিয়ে। black tape নেই। কি করি? এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখি stick padটা পরে আছে। খুঁজে পেতে একটা cello-tape পেয়ে গেলাম। তাই দিয়েই খোলা মুখে ঢাকা পড়ল। check করে দেখলাম কাজ হয়েছে। খোলা switch এর জায়গাটাও বন্ধ হলো একই ভাবে।কি যা-তা কান্ড।
এবার bed-switchটা bed অব্দি আনতে গিয়ে দেখি তারটি লম্বায় খাটো।  কি জ্বালা রে বাবা। সাত-কান্ড রামায়ন  কি এই জন্য করলাম? কি করি? কি করি? আরে ঐতো ! সবুজ পাতাগুলো ঝুলছে দেওয়ালে। ব্যস।  দুটো পিন খুলে নিলাম মাঝের থেকে। আরেত্তেরি ! হাতুড়ি কই? খোঁজ খোঁজ .... গোটা  ঘর গরু খোঁজা খুঁজেও পাওয়া গেল না তাকে।  নিকুচি করেছে। সাজিয়ে রাখা পাথরগুলো কি কাজে লাগবে? ধর পিন পার পাথর। হা হা হা হা হা। হাতুড়ি নেই তো বয়েই গেল। পিন পুঁতে সুইচটা দিব্যি চলে এলো এক্কেবারে বিছানার পাশটিতে। যাক বাবা! যোগারু কাহিনী জিন্দাবাদ।
সব সেরে হাত তা ধোব কিনা ভাবছি ... আরে ধ্যাত। আমি একটি আস্ত গর্ধব। দেওয়ালে ঠকাস করে switchটা ঠোকা খেতেই নিজেকে উপাধিটা দিয়ে ফেললাম। কেন বলুন তো? আর কেন! টুক  করে board থেকে খুলে তো নিলাম switchটাকে, এবার একটা পেণ্টেলুন লাগবে না ওর? ওভাবে থাকলে তো মাঝরাতে আমাকেই ঝটকা দেবে!
বেজার মুখে ঘুরছি এদিক ওদিক। এটা  দেখছি, ওটা দেখছি। কত কিছুই পরে আছে কিন্তু ওটাকে এখন কি দিয়ে ঢাকি! পরেছিল একটা ছোট tik-tak এর খালি বাক্স। হঠাত বুদ্ধি খেলে গেল। একটা দিক কচাত করে কেটে উড়িয়ে দিয়ে switch বাবাজী কে প্যান্ট পরিয়ে দিলাম। যাক, আর রাতের বেলা হাত বাড়ালে ভুতে ঝাকুনি দেবে না।
একবার ভালো করে সব দেখে নিলাম। নঃ! আর কিছু বাকি নেই। কি মজা। নিজেই নিজেকে বাহবা দিলাম এটা-ওটা দিয়ে কাজটা শেষ অব্দি নামিয়ে ফেলার জন্য।
পড়তে গিয়ে মনে হতেই পারে - এটা একটা blog এ post করার মত ঘটনা নাকি? সত্যি বলতে কি একদমই নয়।  কিন্তু তবু আমি করছি। কারণ আমরা এখন এই সব ছোট-খাটো জোগারু কাজের জগত থেকে অনেক দুরে, বড্ড বেশি technical আর sophisticated জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পরেছি আমরা। তাই এই রকম টুকরো টাকরা কাজ এই ভাবে হাতের কাছে পরে থাকা জিনিস যোগার করে করার কথা মাথাতেই আসে না। আমাদের মধ্যে অনেকেই engineer হয়েও এই সব কাজের জন্য লোককে টাকা দি এক গাদা। এই লেখা পরে হয়ত অনেকের আবার মনে পারে যাবে যে এই রকম কাজগুলো আরো ভালো করে হয়ত তারাও করতে পারে। হয়ত এইটা পরে কয়েকজন আগামী কিছুদিন electrician কে পয়সা না দিয়ে নিজেই কিছু কাজ করে নেবে। সেটাই হবে বড় পাওয়া।
কেন?
সেটা নিজেরাই ভেবে দেখুন না!