আমি সৌমি. আমায় জানতে হলে একটু পাতা ওল্টাতে হবে এই খাতাটির. আমার কাছের মানুষ আর তাদের আদর, ভালবাসা, অনুপ্রেরণা থেকে সৃষ্টি কিছু কথা দিয়ে সাজানো এই ছোট্ট খাতা. জীবনের চলার ফাঁকে বেখেয়ালে গড়ে ওঠা কিছু ছন্দ, কিছু গদ্য- সে সব দিয়েই ধীরে ধীরে সাজিয়ে তুলব এই খাতার পাতা.

পাতা ওল্টালে খুঁজে পাবেন অচেনা কিছু জায়গার খবরও. আমার ভ্রমন প্রিয় মন শুধু ঘুরেই সন্তুষ্ট নয়. আমার ঘোরার গল্প আমি শোনাতে চাই সেই সব মানুষকে যারা ঘুরতে ভালবাসেন, ভালবাসেন নতুন নতুন জায়গার সন্ধানে নিরুদ্যেশ হতে. আমি সাধারনতঃ একটু অচেনা অজানা জায়গা, যেখানে লোক কম, যেখানে নেই বাজারের হুল্লোর - সেই সব জায়গায় ঘুরতে যাই একটু নিরবিচ্ছিন্ন বিশ্রামের খোঁজে. এই সব জায়গায় প্রকৃতিকে পাওয়া যায় বড় নিবির করে. মন ভরে যায় ভালবাসা আর শান্তির গভীর আবেগে. সেই সব জায়গার টুকরো টুকরো গল্প নিয়েই আমার এই খাতার একটি পাতা.

যাঁরা আমারই মতো হাঁপিয়ে ওঠেন নিত্যদিনের দৌড় ঝাঁপে; খোঁজেন একটু নতুনত্বের স্বাদ. তাদের জন্য হয়তো আমার এই খাতা হয়ে উঠবে খোলা জানালা. সেই আশাতেই ........

একটু অপেক্ষা করো---

আরো অনেক জায়গা এসেছি ঘুরে। পরে আছে সেইসব লেখা অযত্নে।
চেষ্টা করছি খুব তাড়াতাড়ি তার কিছু তোমাদের কাছে পৌঁছে দিতে।

ছোট করে হরিদ্বার

গিয়েছিলাম IIT Roorkee একটা পাঁচ দিনের course করতে। সোমবার থেকে শুক্রবার। রুরকির থেকে হরিদ্বার মাত্র ৩০ কিলোমিটার। তাই আগের থেকেই ঠিক করে গিয়েছিলাম course শেষে weekend হরিদ্বার ভ্রমনে যাব।

দিল্লী থেকে রুরকি যাওয়ার পথে 

 দিল্লী থেকে রুরকিও এমন কিছু দুরে নয়। তাই শুক্রবার দুপুরে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে শান্তনু মাত্র ৫-৬ ঘন্টায় পৌছে গেল আমার হস্টেলে। সেখান থেকে দুজনে মিলে সোজা হরিদ্বার। গ্রীষ্মের বেলা এদিকে অনেক্ষণ থাকে। তাই দিনের এল থাকতে থাকতেই প্রায় পৌছে গেলাম।  যে ধর্মশালায় থাকার কথা ছিল সেটা শহর থেকে বাইরে। তাই খুঁজে বের করতে সময় লেগে গেল বেশ খানিকটা। এদিকে ওদিক ঘুরে বেশ কয়েক জনকে জিজ্ঞেস করে, খানিক গোলকধাঁধার মত গোলগোল ঘুরে শেষে দেখি সেটা হৃষিকেশ যাওয়ার highway এর উপরেই দিব্বি বিরাজমান।
ধর্মশালাটি বেশ সুন্দর। তিন তলা বাড়ির মাঝখানে বিরাট বাঁধানো উঠোন। তার মাঝে বড় একটি মন্দির। আর মন্দিরের চার পাশ ঘিরে বারান্দা ঘেরা ঘরের তিনতলা সারি। আমাদের ঘরটি বেশ বড়। ঘরে আবার cooler vent ও আছে। রাতে সেই দিয়ে ঠান্ডা হওয়া আসে। তবে দিনের বেলা মাথার উপরের পাখাটিই ভরসা। AC room সব ভর্তি। তাই এই ঘরেই থাকতে হবে।  রাতে এখানে বিনা পয়সায় খেতে দায় আর ভোর ৬টায় চা। খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা মন্দ নয়। সেদিন দেরী হয়ে যাওয়ায় আর এত লম্বা drivingএর ক্লান্তির কারণে আর বাইরে বেরোতে ইচ্ছে করলো না। খেয়ে দেয়ে শুয়ে পরলাম সেদিনের মত। রাতে coolerএর হওয়াতে ভালই ঠান্ডা হয়ে গেল ঘর। দিব্বি ঘুমিয়ে গেলাম দুজনেই।
পরদিন সকালে উঠতে একটু দেরী-ই হয়ে গেল। স্নান করে বেরিয়ে পরলাম গঙ্গার দিকে। গাড়ি নিয়ে চলে এলাম সোজা শহরের দিকে। একটা পুল পার হয়ে এক সরু রাস্তার মধ্যে দিয়ে ঘুরে ফিরে গিয়ে পরলাম এক বিরাট খোলা পার্কিংয়ে। গাড়ি রেখে হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম হরকিপৌরি। মাথার উপর ততক্ষণে আগুন ঢালছে সূর্য্য। হাঁটতে বেশ কষ্ট হচ্ছে তার মধ্যে। ঠিক হলো মনসা মন্দির যাওয়া হবে রোপওয়ে চড়ে। ঘাটের ওখান থেকে রিক্সা করে এলাম একটা সরু গলির মুখ অব্দি। সেখান থেকে ভিড় থেকে উঠে এলাম টিকিট ঘরের সামনে। কিন্তু এ কি বিপদ!! কম করে ৩ ঘন্টার অপেক্ষা রোপওয়ে পেতে। কি হবে? ঠিক হলো হেঁটেই যাব। সিঁড়ি ভেঙ্গে উঠেলাম বাজারের মধ্যে থেকে। এসে পরলাম এক খাড়া উঠে যাওয়া পাহাড়ের গোড়ায়। এখান থেকে শুরু হবে আসল হাঁটা। দুপুর ১১টার ঠা ঠা রোদে তখন হাঁটার কথা ভাবলেই মাথা ঘুরছে আমার। পাশেই দেখি এক লেবু-জলের দোকান। সেখানে ত্রিপল খাটিয়ে বস্তা পেতে বসার জায়গা। টুক করে সেইখানে গলে গিয়ে ঝুপ করে বসে পরলাম। দুজনে দুই গ্লাস লেবু জল খেয়ে বসে রইলাম বেশ কিছুক্ষণ। শান্তনু হয়ত ভাবছিল হেঁটে ওঠার কথা, কিন্তু আমার সে ক্ষমতা ছিল না। ওই রোদে আমি ১০০ মিটারও চলতে পারব মনে হচ্ছিল না। তাই আরো একটুক্ষণ বসে আবার নেমে এলাম সেই ঘিঞ্জি গলির ভিড় ঠেলে।
ঘড়ি তে তখন দুপুর ১২টা। তাই ঘটে ফিরে না গিয়ে টুকটুক করে হেঁটে নেমে এলাম সামনের বাজার। পায়ে পায়ে পৌঁছে গেলাম বিখ্যাত দাদা-বৌদির হোটেলে। যখনই আসি তখনই এই আমাদের খাবার ঠিকানা। দাম একটু বাড়ালেও বাজারের থেকে সস্তা আর পুরো দস্তুর বাঙালিয়ানা। গরমে তেমন ভাবে খেতেই পারলাম না। কোনো মতে দুটি খেয়ে বেরিয়ে পরলাম। বাজারের ভিড় ঠেলে parking আর সেখান থেকে ধর্মশালা। ঘরে ঢুকেই দেখি power cut. দিনের বেলা generator ও চালাবে না। তবে কপাল জোরে একটু পরেই দেখি ফ্যান ঘুরতে শুরু করেছে। বেশ কয়েকবার এল-গেল, শেষে এক সময় ঠিক ভাবে এলো। আমরাও একটু ঘুমিয়ে পরলাম।

দেরী করে শোয়া আর  তাত লেগে যাওয়ায়, বিকেলের বদলে ঘুম ভাঙ্গলো সন্ধ্যে বেলা। বেরিয়ে চা খেয়ে অটো খুঁজতে লাগলাম, হরকিপৌরি যাওয়ার জন্য। বেশ কিছুক্ষণের চেষ্টায় বুঝলাম সুবিধা হবে না। তাই শেষে গাড়ি বের করতে হলো বাধ্য হয়ে। জানিনা কোথায় পার্কিং, কি ভাবে যা। তবু বেরিয়ে পরে এগিয়ে চললাম শহরের দিকে। চলতে চলতে এসে পড়ল highway এর পাশেই নতুন তৈরী হওয়া দোতলা পার্কিং। কিছু না ভেবে এখানেই গাড়ি লাগিয়ে দিলাম। তারপর পায়ে পায়ে গঙ্গার ঘাট। মাত্র ২০০ মিটার হবে হয়ত। সকালেও যদি এখানে গাড়ি রাখতাম অসুবিধা আরো কম হত। জানা রইলো। আর ভুল হবে না। নদী পেরিয়ে উল্টো দিকে বাজার হয়ে সেই দাদা-বৌদির হোটেল। খেয়ে দেয়ে ফিরে এলাম নদীর ধারে। ঠান্ডা হবে বসে রইলাম সব ভুলে। আহা!!! এই প্রাণ জুড়ানো সময়টুকুর জন্যই তো এমন দুরে দুরে আসে মানুষ। রাতের অন্ধকারে কালো জল বয়ে চলেছে আপন মনে। মন জুড়িয়ে যায়।
বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে এবারের মতো বিদায় জানিয়ে ফিরে এলাম আমরা। ঠিক করলাম, আবার আসব, আসব দেওয়ালির সময়। যখন এই জলধারা শুকিয়ে দিয়ে পরিস্কারের করা হয় আর তারপর আবার ভরে যায় জলে। সেই শুকনো গঙ্গা আর তার ভরে যাওয়ার সাক্ষী  হওয়ার পরিকল্পনা দিয়েই শেষ হলো ছোট্ট এই ভ্রমণ।